গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন চোখে পড়ে সারি সারি পেঁপের বাগান। অল্প সময়ে বেশি ফলন, কম শ্রম ব্যয় এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় দিন দিন পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। এতে বদলে যাচ্ছে এই এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতি।
সরেজমিনে নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল গ্রামে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে রেড লেডি, টপ লেডি ও দেশীয় শাহী জাতের পেঁপে গাছের সারি। কৃষক সম্রাট সরকার জানান, আগে ধান চাষে তেমন লাভ হতো না। এখন দুই বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করে ভালো আয় হচ্ছে। “প্রতি গাছে প্রচুর ফল এসেছে,” বলেন তিনি।
আরেক কৃষক মাসুদ সরকার বলেন, “আগে ধান চাষ করতাম, এখন পেঁপে চাষ করে বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ হয়। কারণ সারা বছরই ফল পাই।”
কৃষক রনি সরকার জানান, “পেঁপে একবার লাগালে এক বছরের মধ্যেই ফলন শুরু হয়। যত্ন নিলে দুই বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। তবে অতিবৃষ্টি বা দাম কমে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।”
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কালীগঞ্জে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘায় গড়ে ৩০–৩৫ টন ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বিরতুল গ্রামে স্থাপিত প্যাকেজিং হাউসের মাধ্যমে এসব পেঁপে এবং অন্যান্য সবজি দেশের বাইরে রপ্তানি করা হচ্ছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির উদ্দিন মোল্লা বলেন, “পেঁপে একটি লাভজনক ফসল। সঠিক জাত নির্বাচন, রোগবালাই দমন ও বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকলে কৃষকরা কয়েকগুণ বেশি লাভ করতে পারেন।”
গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “এ জেলার মাটি পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী। পেঁপে পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং কাঁচা–পাকা দুইভাবেই জনপ্রিয়। আমরা কৃষকদের আঙিনা, পতিত জমি ও বাণিজ্যিকভাবে উন্নত জাতের পেঁপে চাষে উৎসাহিত করছি।”
স্থানীয় কৃষকদের মতে, যদি দেশে পেঁপে প্রক্রিয়াজাত শিল্প—যেমন জুস, শুকনো পেঁপে ও কসমেটিকস উৎপাদন—গড়ে ওঠে, তাহলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হবেন এবং গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।