আজ ৭ নভেম্বর: ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

0
31

আজ ৭ নভেম্বর, ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দিনটি গভীর তাৎপর্য বহন করে। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সিপাহি-জনতার এক স্বতঃস্ফূর্ত বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, যা দেশের তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করে নতুন পরিচয় ও ধারার উন্মোচন করে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে একাধিক সামরিক অভ্যুত্থান ও পালটা অভ্যুত্থানের ফলে যখন চরম নৈরাজ্যমূলক ও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, তখন সিপাহি ও জনতার সম্মিলিত এই বিপ্লব দেশকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেয়। এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই তৎকালীন সেনাপ্রধান, স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সাময়িক বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং জাতীয় নেতৃত্বে উঠে আসেন।

বিএনপিসহ তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি বছর এই দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। বিএনপি সরকারের আমলে দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হলেও, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার সেই ছুটি বাতিল করে।

পটপরিবর্তন ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ৭ নভেম্বরের এই পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। এর ফলেই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয় এবং সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে।

সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান তার ‘কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ বইয়ে উল্লেখ করেন, “৭ নভেম্বর গোটা দেশজুড়ে সৈনিক-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত এক অভূতপূর্ব উত্থান ঘটে। আর জেনারেল জিয়া সে অভ্যুত্থানের উত্তাল তরঙ্গমালার শৃঙ্গে আরোহণ করে উঠে আসেন জাতীয় নেতৃত্বে পাদপ্রদীপে।”

তদানীন্তন দৈনিক বাংলার রিপোর্টে এই বিপ্লব সম্পর্কে বলা হয়েছিল, “সিপাহি ও জনতার মিলিত বিপ্লবে চার দিনের দুঃস্বপ্ন শেষ হয়েছে। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন।”

৭ নভেম্বর ভোরে রেডিওতে জেনারেল জিয়ার কণ্ঠে ভেসে আসে ঐতিহাসিক আহ্বান— “আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি।” জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানান। ওইদিন রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে। পথে পথে সিপাহি ও জনতা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন এবং সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কের নলে ফুলের মালা পরিয়ে দেন। এই আনন্দের ঢেউ রাজধানী ঢাকা ছাড়িয়ে দেশের সব শহর-নগর ও গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।